নরবলি হতো একসময় , এখন তা অতীত : ঐতিহ‍্যের কালীপুজো পাত্রসায়ের এর ঘোষ বাড়ীতে

11th November 2020 9:46 am বাঁকুড়া
নরবলি হতো একসময় , এখন তা অতীত : ঐতিহ‍্যের কালীপুজো পাত্রসায়ের এর ঘোষ বাড়ীতে


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) :  এ এক অন্য ইতিহাস নরবলি দিয়ে শুরু হয় কালীপুজো । কালী মা নিজেই নিজের পূজার সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে তার পুজো শুরু করেন ঘোষ পরিবারে । শারদোৎসব শেষে কালী পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে দিকে, দিকে । তেমনি পুজোর প্রস্তুতি শুরু বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের খোশালপুর গ্রামের বর্ধিষ্ণু ঘোষ পরিবারেও । প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীণ এই কালী পুজোকে ঘিরে উৎসবের চেহারা নেয় পুরো গ্রাম । এই পুজো শুরু নিয়েও বিশেষ লোক কথা প্রচলিত আছে । সবচেয়ে জনপ্রিয় লোককথা হলো, মোটামুটি ১৭০০ সালে হুগলির সেনাই গ্রামে এক লেঠেল পরিবার বাস করতেন । বর্গীদের হাতে যুদ্ধে বাবার মৃত্যুর পর দুই ভাই বানেশ্বর ঘোষ ও পরাণ ঘোষ প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়িত হয়ে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পাত্রসায়রের খোশালপুর গ্রামে পৌঁছান । সেখানে তৎকালীন জমিদারের আশ্রয়ে তাঁরা থাকতে শুরু । পরে জমাদারের কথা মতো এক নিঃশ্বাসে দুই ভাই গ্রামের বড়পুকুর যান এবং জমিদার ঐ জমি দুই ভাইকে নিস্কর দান করেন । এভাবেই চাষাবাদ করে দুই ভাইয়ের সংসার চলছিল । খোশালপুর গ্রামের পাশেই ছিলো বেনেডাঙ্গা সেখানে বসবাস করতেন বেনিয়ারা বেলেডাঙ্গা জঙ্গলে ছিল একটি ছোট্ট কালী মূর্তি । আর সেই কালী মায়ের মূর্তি কে দিনের-পর-দিন অপবিত্র করতেন ওই বেনে সম্প্রদায়ের মানুষেরা , কিন্তু মায়ের উপর অত্যাচার হওয়ায় তিনি কূপিতা হন । ঠিক তখনই পরান ঘোষের স্ত্রী স্থানীয় কালীবাধ পুস্কুরণীতে শাঁখা পলা পরিহিতা মায়ের কৃষ্ণ বর্ণের হাত দেখতে পান এবং পরে রাতে পুজো শুরুর স্বপ্নাদেশ পান । মায়ের কথা মত বেনেডাঙ্গার জঙ্গলেই মায়ের পুজো শুরু হয় তখনো প্রতিদিন বেনেদের দ্বারা মা অপবিত্র হতেন । ফলে মায়ের ক্রোধ দ্বিগুণ হতে থাকে ফলে মায়ের রোশে পড়ে বেনেদের এক যুবক মায়ের খাড়া নিয়ে নিজেই নিজের শিরশ্ছেদ করেন । প্রাণ ভয়ে রাতারাতি বেনে সম্প্রদায়ের মানুষেরা ওই এলাকা থেকে পলায়িত হন অন্যত্র । এমনকি তারপর থেকে ঘোষ পরিবারের লোকেরাও ওই জঙ্গলে যেতে ভয় পেতেন । পরে আবার ওই একই পুকুরে অর্থাৎ কালীবাধ পুস্কুরণীতে শাঁখা পলা পরিহিতা মায়ের কৃষ্ণ বর্ণের হাত দেখতে পান পরান ঘোষের স্ত্রী এবং মা তাকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন " আমার মূর্তি তোদের বাড়িতে স্থাপিত কর আমি আর কারোর কোন ক্ষতি করব না আমার নরবলির সাধ মিটেছে এবং তোদের পরিবার আনন্দে উচ্ছাসে মেতে উঠবে ধনসম্পত্তিতে ভরে উঠবে " উত্তরে পরান ঘোষের স্ত্রী বলেন আমাদের তো কিছুই নেই কিভাবে আপনার পুজো করবো ঠিক তখনই মা নিজের পুজোর দায়িত্ব নিজেই বহন করেন । এক কিশোরীর বেশে পুজোর আয়োজন করার জন্য মৃৎ শিল্পীর বাড়ি গিয়ে প্রতিমা তৈরীর কথা , পুরোহিতের বাড়িতে তাকে পুজো করার কথা বলেন এমনকি বাদ্যকর সহ অন্যান্যদের আসার কথা বলে কথিত আছে । পরে ঘোষ পরিবার পুজোর সঙ্গে যুক্তদের বেশ কিছু জমি দান করেন ঘোষ পরিবার এর পক্ষ থেকে । এভাবেই আজও সমান উৎসাহ নিয়ে গ্রামে পুজো হয়ে আসছে ।





Others News

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : তোপধ্বনি তে কেঁপে উঠল বিষ্ণুপুর । শুরু হল মল্ল রাজাদের ১০২৫ বছরের অষ্টমী পূজোর সন্ধিক্ষণ।

প্রাচীণ ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে আজও নিষ্ঠাভরে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে দেবী দুর্গা 'মৃন্ময়ী নামে পূজিতা হন। জানা গিয়েছে, পূর্ব প্রথা মতোই প্রাচীণ রীতি মেনে মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে কামান দাগার মধ্য দিয়ে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে শুরু হয়ে গেল 'বড় ঠাকরুনে'র পুজো। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দর্শক সাধারণের উপস্থিতি ছিল বাঁধভাঙ্গা। সরকারী নিয়মকে মান্যতা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে দেবী বন্দনা। এমনকি এখানে কামান দাগার পর্বেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে অল্প সংখ্যক লোককে নিয়ে ঐ কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

শুরুর সময় থেকে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ ঘোষণা করা হয় বড় কামানের গর্জনের শব্দে। যার আওয়াজে রাজবাড়িতে আরতি নৃত্যও শুরু হয়ে যায়।